সকাল ১১:৪৭ | মঙ্গলবার | ৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বসন্তকাল | ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ইসির নিবন্ধন পেতে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে এনসিপিকে

এনজি প্রতিবেদন
০৯ মার্চ ২০২৫

 

 

জুলাই গণবিপ্লবে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে গঠিত হয় জাতীয় নাগরিক পার্টি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে দলটি। দলটির প্রতি সাধারণ মানুষের অনেক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন করে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার সংকল্প তুলে ধরেছে অভ্যুত্থানের সংগঠকদের জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।তবে দলটি এখনো নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেনি।

রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসির নিবন্ধন পেতে নতুন দলটিকে বেশ কিছু নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। নিবন্ধন সংক্রান্ত ধারা-উপধারাগুলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) রয়েছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে চায় দলটি। দ্রুত শেষ করতে চায় গঠনতন্ত্র প্রণয়ন; দলীয় প্রতীক, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, স্লোগান ও মূলনীতি নির্ধারণ এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয় নির্ধারণসহ সব কাজ। শর্ত পূরণ করে দলের নিবন্ধন পেতে আবেদন করতে চায় নির্বাচন কমিশনে (ইসি)।

২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এরইমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করছেন দলের নেতাকর্মীরা। দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিতে চান সব সংসদীয় আসনে। গড়ে তুলতে চান রাজনৈতিক জোট। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ একাধিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। যদিও এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের আবেদন করতে পারেনি তারা। কেননা এজন্য কোনো শর্তই এখনো পূরণ করতে পারেনি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হলে দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কার্যালয় এবং অন্তত ১০০ উপজেলা বা ক্ষেত্র অনুযায়ী মেট্রোপলিটন থানা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হয়। এ ছাড়া নিবন্ধনের জন্য বিবেচিত হতে হলে, দলের গঠনতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট কিছু বিধান স্পষ্টভাবে থাকতে হয়। দল ঘোষণা হলেও এগুলোর কোনো কিছুতে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে পারেনি এনসিপি।

যদিও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ইসির বর্তমান আইনকে ‘কালো আইন’ বলছেন এনসিপির নেতারা। তাদের মতে, ইসির অনেকগুলো কালো আইন রয়েছে। আইন সংস্কার কমিশন এসব সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। জনস্বার্থে এসব কালো আইন বাতিল/সংশোধন করা উচিত। যদিও বর্তমান আইনের আওতায় নিবন্ধন পাওয়া কঠিন হবে না বলে মনে করেন এনসিপির নেতারা।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব যুগান্তরকে বলেন, আমরা দ্রুতই দলীয় নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করতে চাই। আবেদনের জন্য যে শর্ত রয়েছে সেগুলো পূরণ করতে চাই। সেভাবেই সাংগঠনিক কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ইসি জানায়, আরপিওর ধারা ৯০-এ নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন পাওয়া এবং নিবন্ধন বাতিলের বিধান উল্লেখ করা রয়েছে। নিবন্ধনের জন্য এনসিপিকে ইসিতে দরখাস্ত দাখিল করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য দলের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরে তফসিলের ফরম কমিশন বরাবর দাখিল করতে হবে। ইসিতে নিবন্ধন দাখিলের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে।

পাঁচ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি ইসি সচিব বরাবর জমা দিতে হবে। এই ফি অ-ফেরতযোগ্য। পাঁচ হাজার টাকা সচিবের অনুকূলে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। বিধি ৪ এ উল্লিখিত দরখাস্তের সঙ্গে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে।

প্রয়োজনীয় দলিলাদি হিসেবে দলের গঠনতন্ত্র, দলের নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো এবং পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের পদবীসহ নামের তালিকা, দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক-অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের নাম এবং উক্ত অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ হিসাব, দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ ইসিতে জমা দিতে হবে।

দলের নিবন্ধনের দরখাস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র, নিবন্ধন ফি বাবদ ট্রেজারী চালানের কপি জমা দিতে হবে।

দলীয় প্রতীক নিয়ে অন্তত একটি আসনে জয়ী হওয়ার যোগ্যতা সংক্রান্ত সমর্থন দলিল জমা দিতে হবে। নির্বাচন অংশ নিতে ইচ্ছুক কোনো আসনে মোট ভোটার সংখ্যার শতকরা ৫ ভাগের ভোট/সমর্থন লাভের যোগ্যতার প্রমাণ লাগবে। দলের একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর থাকতে হবে। এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর এবং প্রতি উপজেলায় বা থানায় ২০০ ভোটার সদস্য হিসেবে দলের তালিকাভুক্তি বা তাদের সমর্থন থাকতে হবে।
আইন অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনে ওই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৯টি।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *