রাত ৪:৩২ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আমরা রাজনৈতিক দল তো ভোটের কথাই বলব : তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ ডেসেম্বর ২০২৪

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নির্যাতনের জবাব হিংসায় নয়, ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দিতে চাই।

আজ বুধবার বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির উদ্যোগে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক টাঙ্গাইল জেলা, গাজীপুর মহানগর ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা অন্যায়ের জবাব দিতে চাই।

ভোটের মাধ্যমে সমর্থন পাওয়াই জনগণের আস্থার প্রতিফলন মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ভোটের মাধ্যমে আস্থা আমাদের অর্জন করতে হবে। সেই আস্থা অর্জন মুখে বললে হবে না। মানুষ জানতে চায়, আমরা তাদের জন্য কী করব। মানুষ যখন জানতে পারে আপনি বিএনপির কর্মী, তখনই আপনাকে জিজ্ঞেস করে, তোমরা এটার কী করবে বা ওটার কী করবে? আমরা আস্থার একটা পর্যায়ে আছি। আমাদের এই আস্থাকে ধরে রাখতে হবে। আগামীর ভোটই শুধু ভোট না। অনেকে বলে, তারেক রহমান শুধু ভোট ভোট করে। আমরা রাজনৈতিক দল, আমরা তো ভোটের কথাই বলব। আগামীর নির্বাচন করেই কী আপনি ক্ষান্ত দিয়ে দেবেন। মানুষ জানতে চায় আমরা কী করব। এখন শুধু কথায় চিড়া ভিজবে না।

জনগণের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, মানুষের আস্থা ধরে রাখতে হবে। নির্বাচিত হলে বিএনপির প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ পরবর্তী নির্বাচনের আগে জনগণকে দেখাতে হবে আপনি কী কী করতে পেরেছেন। সবটা হয়তো আমরা পারব না, তবে যতটুকু করব তা জনগণের কাছে তুলে ধরব। তখন জনগণ এর বিচার করবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গত দেড় দশকে আমাদের বহু সহকর্মী খুন হয়েছেন। শুধু জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। আর কোন রাজনৈতিক দলের এত মানুষ মারা গেছে কি না, জানি না আমরা। গত ১৬ বছরে আমাদের দলের বহু নেতাকর্মীর বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বললে আমার ওপর নির্যাতন হয়েছে। আমরা বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমার ভাই তাদের অত্যাচারে মারা গেছে। আমরা এই নির্যাতনের জবাব যদি তাদের মতো দিই, তাহলে তো হবে না। তারা অধম বলে আমরা অধম হবো নাকি? আমরা এর জবাব ৩১ দফা সফল করার মাধ্যমে দেব। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তাদের জবাব দেওয়া হবে।

তারেক রহমান বলেন, এখানে যারাই আছেন প্রত্যেকের নামে একটি হলেও গায়েবি মামলা রয়েছে। এত নির্যাতন সহ্য করে জেল খেটেছেন আপনারা, কষ্ট করেছেন। কেন আপনারা এমন কাউকে সুযোগ দেবেন যে, আপনাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দেবে। কিছু লোক তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের সব কষ্টে পানি ঢেলে দিচ্ছে। কেন তাদের সেই সুযোগ দেবেন আপনারা? তিনি বলেন, মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। আপনাদেরও জনগণের দিকে তাকাতে হবে। আপনাদেরও বুঝতে হবে কী করলে জনগণ আপনাকে আরও পছন্দ করবে। আপনার অধীনে অনেক নেতাকর্মী থাকবে। তাদের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরিবারের দুষ্টু বাচ্চাদের যেমন টাইট দিয়ে রাখতে হয়, তেমনি দলের ভেতরও দুষ্টুরা আছে, থাকতে পারে। আমাদের এই দুষ্টুদের টাইট দিয়ে রাখতে হবে। তারা হয়তো দলের অনেক ক্ষতি করে ফেলছে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। এই আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব আপনার। এটি জনগণের দায়িত্ব না। আমরা নিজেদের সংযত রাখব এবং আমাদের সহকর্মীদের সংযত রাখতে চেষ্টা করব। মানুষ চায় না এমন কাজ কেন আপনি করবেন, যেখানে আপনাদের আস্থার সংকট দেখা দেবে। তিনি বলেন, স্বৈরাচার যখন জনগণকে অধিকারবঞ্চিত করে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, তখন আমি বলেছিলাম টেক ব্যাক বাংলাদেশ। এর অর্থ হলো, জনগণের বাকস্বাধীনতা ও জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশে কী হবে, তা বাংলাদেশের মানুষ ঠিক করবে। টেক ব্যাক বাংলাদেশের প্রথম লক্ষ্য দেশের মানুষের সহযোগিতায় দেশের গণতন্ত্রকামী দলগুলো স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে। স্বৈরাচারের মাথা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত ১৬ বছর তারা নিজেদের আখের গোছাতে ভিনদেশে তাদের প্রভুকে খুশি করতে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য (কেন্দ্রীয় দপ্তরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, ‘আমরা বিএনপি পরিবারের’ কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু প্রমুখ।

গাজীপুরের কর্মশালা : এদিকে আজ গাজীপুর মহানগর বিএনপি আয়োজিত ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারেক রহমান বলেন, সরকার গঠনের পাঁচ বছরে অন্তত ৫ কোটি গাছের চারা লাগানোর পরিকল্পনা আছে। এর পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের মানুষকেও সচেতন করতে হবে। যতগুলো পলিথিনের বিভিন্ন জিনিস রাস্তাঘাটে ফেলে রাখা হয়, এগুলো যাতে রাস্তায় না ফেলা হয় সেই বিষয়ে আমাদের মানুষকে সচেতন করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের গাজীপুর মহানগরী, আশুলিয়া, সাভারসহ ইন্ডাস্ট্রি এরিয়াতে অনেক প্রিন্টিং কারখানা রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া খাল এবং নদীগুলো পুনরায় খনন করতে হবে। বন্যা থেকে শুরু করে শুষ্ক মওসুমে সব সময় পানির বিভিন্ন বিষয়গুলোর প্রতি নজর রেখে আরও পরিকল্পনা সাজাতে হবে।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকারের সভাপতিত্বে ও বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। প্রধান আলোচক ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মাহাদী আমিন। আরও উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার, বিএনপি নেত্রী হালিমা আক্তার, শাম্মী আক্তার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডাক্তার মাজহারুল আলম, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল করিম রনিসহ গাজীপুর মহানগর বিএনপি এবং সব অঙ্গ সংগঠনের নেতারা।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *