দুপুর ১:২১ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আট মাসে বজ্রপাতে ২৯৭ জনের মৃত্যু

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০৫ অক্টোবর ২০২৪

 

চলতি বছরের ফেব্রয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট মাসে বজ্রপাতে ২৯৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন ৭৩ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জয়পুরহাট ও হবিগঞ্জ জেলায়। এসব জেলায় ১৩ জন করে মারা গেছেন। তবে, প্রথম মাস জানুয়ারিতে বজ্রপাতে প্রাণহানির কোনো ঘটনা নেই।

শনিবার (৫ অক্টোবর) স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএফ) সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। দেশের জাতীয় এবং আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা, কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশনের স্ক্রল থেকে বজ্রপাতে হতাহতের তথ্য সংগ্রহ করেছে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বজ্রপাতে প্রাণহানির কোনো ঘটনা নেই। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাকি আট মাসে বজ্রপাতে ২৯৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জন শিশু, ৫৫ জন নারী। ৫৫ নারীর মধ্যে ৬ জন কিশোরী। এছাড়া মোট মৃত্যুর মধ্যে ২৪২ জনই রয়েছে পুরুষ। তাদের মধ্যে কিশোরের সংখ্যা ১৭ জন।

চলতি বছরের ৮ মাসে (ফেব্রয়ারি-সেপ্টেম্বর) শুধু কৃষিকাজের সময় বজ্রপাতে ১৫২ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু গরু আনতে গিয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন মাসের বজ্রপাতে হতাহতের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বজ্রপাতে ফেব্রুয়ারিতে একজন নিহত হয়েছেন। মার্চে ৯ জন। এর মধ্যে ৮ জন পরুষ ও একজন নারী। এ মাসে আহত হয়েছেন ছয়জন। সবাই পুরুষ।

এপ্রিলে ৩১ জন। এর মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১১ জন নারী। একজন শিশু এবং দুইজন কিশোরী। এ মাসে আহত হয়েছেন একজন পুরুষ। মে মাসে নিহত হয়েছেন ৯৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯ জন, নারী ১৭ জন। তাদের মধ্যে শিশু দুইজন এবং কিশোর দুই ও কিশোরী একজন। এ মাসে ২৮ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ২৩ জন, নারী ৫ জন।

জুন মাসে নিহত ৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬১ জন, নারী ১৬ জন। এর মধ্যে শিশু ৫ জন, কিশোর সাতজন। আহত হয়েছেন ১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ জন, নারী দুইজন।

জুলাই মাসে নিহত হয়েছেন ১৯ জন। এর মধ্যে নারী একজন এবং ১৮ জন পুরুষ। আহত হয়েছেন ১০ জন। এর মধ্যে একজন নারী এবং ৯ জন পুরুষ।

এছাড়া আগস্টে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন নারী ও ১৪ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে একজন করে শিশু, কিশোর ও কিশোরী রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন দুইজন, দুজনেই পুরুষ।

অন্যদিকে, সেপ্টেম্বরে নিহত হয়েছেন ৪৭ জন। তাদের মধ্যে ৪১ জন পুরুষ ও ছয় নারী। দুইজন শিশু, চারজন কিশোর ও দুইজন কিশোরী রয়েছে। আহত হয়েছেন ১২ জন। এর মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও দুইজন নারী।

চলতি বছর সবচেয়ে যে সব জেলায় নিহত হয়েছে তার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৩ জন, জয়পুরহাটে ১৩ জন, হবিগঞ্জে ১৩ জন, ফেনীতে ১২ জন, কক্সবাজারে ১০ জন এবং গাইবান্ধায় ১০ জন।

ধান কাটা, ঘাস কাটা, গরু আনা ও নানান ধরনের কৃষিকাজের সময় বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছর শুধু কৃষিকাজের সময় বজ্রপাতে ১৫২ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে শুধু গরু আনতে গিয়ে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মাছ ধরার সময় ৫২ জন জেলের মৃত্যু হয়েছে। আম কুড়ানোর সময় ১১ জন, ফাঁকা রাস্তায় চলাচলের সময় ১৫ জন, ঘরে থাকাকালীন ২৭ জন, পাথর উত্তোলনের সময় ৩ জন, বাড়ির আঙিনায় খেলার সময় ১৪ জন শিশু-কিশোর ও গাড়িতে থাকাকালীন একজনের মৃত্যু হয়েছে।

মৃত্যুর এ পরিসংখ্যান কমাতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি জানানো হয়েছে। এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা। দাবিগুলো হলো-

>> পাঠ্যপুস্তকে বজ্রপাত সচেতনতার অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা।

>> ৩০ মিনিট আগেই বজ্রপাতের পূর্বাভাস জানা যায়, সরকারি তথ্যের (গভ. ইনফো) মাধ্যমে তা জানানো।

বিজ্ঞাপন

>> কৃষক ও জনসাধারণের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে সভা, সেমিনার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

>> মাঠে মাঠে শেল্টার সেন্টার স্থাপন।

>> আহতদের ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া করা।

রাশিম মোল্লা বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত খেটে খাওয়া মানুষ। বজ্রপাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষায় একাধিক মন্ত্রণালয় বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা শুনে আসছি। কিন্তু সেগুলোর কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। শুধু সচেতনতার অভাবেই বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকরী সচেতনতামূলক কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো রাশিম মোল্লা, গবেষণা সেলের প্রধান নির্বাহী আবদুল আলীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ ও আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফারুক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

 

জেআইএম / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *