নিজস্ব প্রতিবেদক
২৭ আগস্ট ২০২৪
গত রোববার সচিবালয়ে আনসারদের দাবী আদায়ের আন্দোলনের নামে যে ঘেরাও ও হামলা চালানো হয়, ঠিক অনুরূপ আউটসোর্স কর্মচারীদের ব্যানারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে ঢাকা ওয়াসতে। জানা গেছে, আন্দোলনরতদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের ক্যাডার। যাদের কিছুদিন আগেও বিএনপি-জামায়াতসহ ছাত্র জনতার আন্দোলনে হামলা, বাধা দেয়ার সাথে দেখা গেছে। সূত্র জানায়, দলীয় এই ক্যাডারদের নেপথ্যে ইন্ধন যোগায় মোটা অংকের টাকা নিয়ে এদের চাকরি দেয়া বহুল বিকর্কিত ও দুর্নীতিবাজ বিদায়ী এমডি তাকসিম খানের সুবিধাভোগী কতিপয় প্রকৌশলী।
জানা গেছে, গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় আড়াই হাজার দলীয় কর্মী ও ক্যাডার বাহিনীকে নিয়োগ দেয়া হয় ঢাকা ওয়াসার আউট সোর্সিং খাতে। যারা চুক্তি ভিত্তিক ওয়াসার পাপ¥, বিলিং, মিটার রিডিং, পিয়ন, ড্রাইভারসহ বিভিন্ন খাতে চাকরী করছে। গত ১৫ বছর ধরে নিয়োগ পাওয়া এসব অস্থায়ী ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তাদের স্থায়ীকরণসহ দাবি দাওয়া নিয়ে কোনো রকমের আন্দোলন না করলেও গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে তখণকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর এসব লোকজন ধারাবাহিক শোডাউন করে যাচ্ছে। অবস্থা এমন যে, এইসব আউট সোর্সিং এর কর্মচারীরা দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তাও প্রদর্শন করে। তাদের ভয়ে অনেকেই তটস্থ হয়ে পড়েন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার এই সব কর্মচারীরা দাবি দাওয়া নিয়ে ওয়াসার সামনে অবস্থান নেয় এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত ভবনের ভেতরে থাকা অন্যান্য কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা তাদের দাবি মেনে না নিলে সংশ্লিষ্টদের প্রাণহানি ঘটনোসহ নানা ধরণের ভীতিকর শ্লোগান দিতে থাকে।
সূত্র জানায়, মূলত পালিয়ে যাওয়া সাবেক আওয়ামী সরকারের সমর্থিত এসব নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার সমর্থিত নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যই এভাবে শোডাউনসহ ভীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছে। তারা যে কোনোভাবে সরকারকে বিপদে ফেলতে চায়। চাকরী স্থায়ী করা বা দাবি মেনে নেয়া তাদের মূল লক্ষ্য নয়।
জানা গেছে, আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের ক্যাডার। তাদের অনেকেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের লোক বলে মন্তব্য করেছেন। আউট সোর্সিংয়ের এই আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা আসিফ, বিলিং সহকারি, জোন-৩, রোমান শেখ, বিলিং সহকারি, জোন-৩, আল মামুন, বিলিং সহকারি, জোন-৬, নাছির খান, বিলিং সহকারি, জোন-৬, আপন, জোন-৯, লুৎফুর রহমান লস্কর, আমিনুল, এরা সবাই আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মী ও ক্যাডার।
সূত্র বলেছে, এদের আন্দোলনে যখন সবাই ভীত তখন ওয়াসা ভবনে অবস্থিত কর্মকর্তাদের মিটিং হয়েছে। এসব মিটিংকে লক্ষ্য করে তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ দেখে নেয়া হবে, দাবি না মানলে লাশ বানিয়ে ফেলা হবে’ এসব হুশিয়ারি দেয়। তারা সংশ্লিষ্টদের সাথে খুবই আগ্রাসী ব্যবহার করে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের আউট সোর্সিংয়ে থাকা এসব আন্দোলনকারীদের ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজ সদ্যবিদায়ী এমডি তাকসিম এ খানের কিছু লোক। যারা ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগে চাকরী করছেন। এরাও আওয়ামী লগি সমর্থিত বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে, সংগ্রহ-১ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আল আমিন। তাকসিমের স্টাফ অফিসার নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম, নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান,রফিকুল ইসলাম, নিপু, আসকার ইবনে শায়খ খাজা, সাহাবুদ্দিন সরকার, ঢাকাইয়া আজিজ, আবু বকর সিদ্দিকসহ সকল জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তাগণ।
জানা গেছে, সাবেক এমডির এসব লোকজন এদের আত্মীয়-স্বজনসহ গত এক যুগে আড়াই হাজারের অধিক চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগ করেছে। বিভিন্ন মানুষদের কাছ থেকে এরা মাথাপিছু দুই থেকে তিন লাখ টাকা করে নিয়েছে। নিয়োগকৃতদের যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী পন্থী।
অভিযোগে প্রকাশ, বর্তমান অন্তবর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে গত ৫ আগস্টের পর থেকেই কাওরান বাজারস্থ ওয়াসা ভবনে তিন/চার শতাধিক লোক জড় করে আউটসোর্সিং এর ব্যানারে আন্দোলন শুরু করে। তাদের দাবী চাকরি স্থায়ী করন। অথচ তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সরকারের আউটসোর্স নীতিমালা অনুযায়ী ঠিকাদার ফার্মের মাধ্যমে। ওয়াসা তাদের কোনো নিয়োগপত্র দেয়নি। তাদের বেতনও দেয় ঠিকাদাররা। ওয়াসার সাথে চুক্তি হলো ঠিকাদারের। তাদের বেতনও ওয়াসা ঠিকাদারকে পরিশোধ করে। তারা ভবনের সবাইকে জিম্মি করে রাখে। লিফট আটকে রাখে।কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়। ওয়াসার ইউনিয়ন (সিএি) নেতারাও এসে তাদের শান্ত করতে পারেনি। পরবর্তীতে ওয়াসার বর্তমান এমডি একেএম শহীদ উদ্দীন এসেও তাদের সরাতে পারেননি। তাদের দাবী তাদের চাকরীতে রেগুলার করতে হবে। এখনই এই ঘোষণা দিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসা জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম খান এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একটি মহল ওয়াসা ভবনে ষড়যন্ত্র করছে। এদেরকে সাবেক এমডি তাকসিম এ খানের কিছু লোক ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে। যারা ওয়াসায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি বলেন, আমরা বর্তমান এমডিকে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, যারা অরাজকতার সাথে জড়িত, যারা দুর্নীতির সাথে জড়িত, তাদের যেন অবিলম্বে বহিস্কার করা হয়। এদের যদি বাদ দেয়া না হয়, তাহলে আমরা আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
সূত্র মতে, বিগত প্রায় দেড় দশকে ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসব কারণে জনরোষে পদত্যাগ করেছেন ওই সময়ে দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। তবে তার দুর্নীতির শীর্ষ দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে থেকে দাপট দেখাচ্ছে। ওয়াসা সংশ্লিষ্টরা বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রকৌশলী তাকসিম পালিয়ে গেলেও তার সহযোগীরা এখন ম্যানেজ করে বীরদর্পে সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম সহিদ উদ্দিন ঢাকা ওয়াসার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। ঢাকা ওয়াসায় তার ক্যারিয়ার দীর্ঘদিনের। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তিনি দায়িত্ব নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বললেও সাবেক দুর্নীতিবাজ এমডির দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ও পদে বসিয়ে রেখে প্রশাসন পরিচালনা করছেন।
এসব বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম সহিদ উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, যারা দাবি দাওয়ার নামে শোডাউন করছে, তাদের বিষয়েও আমরা ব্যবস্থা নেব। ঢাকা ওয়াসা সেবাধর্মী সংস্থা, নগরবাসীকে সর্বোচ্চ পানি ও পয়ঃসেবা দিতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এটা অব্যাহত থাকবে।
জা ই / এনজি