ভোর ৫:৩২ | মঙ্গলবার | ৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বসন্তকাল | ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে বিএমইউ : দাড়ি রাখায় অপমান, হিজাবে হুমকি: এবার গাজা সংহতিতে বাধা শিক্ষকের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
৭ এপ্রিল ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে চাইলে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক ক্লাসে অংশ নিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিনের বিরুদ্ধে।

সোমবার (৭ এপ্রিল) সকালে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যান্য চিকিৎসক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোমবার (৭ এপ্রিল) সকালেই সব ক্লাস ও পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে অধ্যাপক সুলতানা আলগিন সেই নির্দেশনা অমান্য করেই এমডি কোর্সের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিত থাকতে জোর করেন এবং অনুপস্থিত থাকলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বন্ধ বা ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন একাধিক শিক্ষার্থী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমডি কোর্সের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম গাজার মানুষের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ক্লাস বর্জনের মাধ্যমে সংহতি জানাতে। কিন্তু ম্যাম আমাদের স্পষ্ট করে বলেন যে, ক্লাসে না আসলে ভবিষ্যতে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব না। অনেকেই ভয় পেয়ে ক্লাসে যেতে বাধ্য হই।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্যান্য স্যারদের তুলনায় উনি বেশ কঠোর মানসিকতার। তিনি যদি জানতে পারেন তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলেছে, তাহলে কোন না কোনোভাবে তাকে পরীক্ষায় আটকে দেবেনই। তাই ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না।’

শুধু সাম্প্রতিক ঘটনা নয়, অধ্যাপক আলগিনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানান। চিকিৎসক রিফাত বলেন, ‘আমার এক সহপাঠী শুধু দাড়ি রাখার কারণে সুলতানা আলগিন ম্যামের কাছে বারবার অপমানিত হয়েছেন। হিজাব পরা ছাত্রীদের সঙ্গেও উনি হুমকিসুলভ আচরণ করেন। এই বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না, কারণ ফেল করানোর ভয় সবার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডা. আলগিনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও তদন্ত বা শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।’

অভিযোগ রয়েছে, অধ্যাপক আলগিন সরকার-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) একজন সক্রিয় সদস্য। অতীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিলে শিক্ষার্থীদের জোর করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ধর্মীয় পোশাক বা প্রতীক বহনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কথাও উল্লেখ করেন একাধিক শিক্ষার্থী। এমন অবস্থায় অধ্যাপক সুলতানা আলগিনকে তার প্রশাসনিক ও একাডেমিক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, ‘একজন শিক্ষকের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের মানসিক ও একাডেমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও ধর্মীয় বৈষম্যপূর্ণ আচরণ একটি গণতান্ত্রিক শিক্ষা পরিবেশের পরিপন্থি। যখন একজন শিক্ষক তার ক্ষমতা, রাজনৈতিক পরিচয় বা ব্যক্তিগত মতাদর্শ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার হরণ করেন, তখন তা শুধু শিক্ষার্থী নয়, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’

উপাচার্য বলেন, ‘ডা. আলগিনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি এসেছে, আমরা সেটি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

 

জা ই/ এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *