বিশেষ প্রতিবেদন
মোহাম্মদ জাফর ইকবাল
০৩ জানুয়ারি ২০২৫
: দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে একটা বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজপথে সরব দলটি। নানা ইস্যুতে চলমান আন্দোলনে দলটির সাথে ছিল সরকার বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও। এই সময়ে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনের দুটিই বর্জন করে আন্দোলনকারীরা। দীর্ঘ এই সময়ে আন্দোলনের প্রধানতম কারণ ছিল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন। বিএনপিসহ সরকার বিরোধীরা ভোটাধিকারসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করলেও ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দমন পীড়ন, মামলা হামলা, গ্রেফতারের কারণে দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয় তারা। তবে শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণ অভূত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটলে ‘অন্যরকম’ একটি বছর শেষ করে বিএনপি। ভিন্ন একটি আবহে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে দলটি। নতুন বছরে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এখন সরব বিএনপি।
সূত্র মতে, বিদায়ী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দলীয় সরকারের অধীনে ৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের অধিকাংশ দল। একই সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তার আগের বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে সংঘর্ষ বাধিয়ে মহাসচিবসহ অধিকাংশ নেতাকে কারারুদ্ধ করে সরকার। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার হওয়া এবং তার আগে থেকে কারাগারে থাকা দলটির ১৫ নেতাকর্মী কারা হেফাজতেই মৃত্যুবরণ করেন। বিএনপির অভিযোগ, কারাগারে নির্যাতন করে তাদের হত্যা করা হয়। হামলা-মামলার ধকল সামলানোর পাশাপাশি ঘরোয়া সভা-সমাবেশে নতুন নির্বাচন ও দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানায় দলটি।
অন্যদিকে, জুন মাসে ভারত সফরে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সফরে ভারতকে রেল ট্রানজিট দেওয়াসহ সাতটি সমঝোতা স্মারকে নতুন করে চুক্তি করে আসেন তিনি। চুক্তিগুলো বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করে বিএনপি। একই সঙ্গে দেশবিরোধী এসব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ এবং শরিক দলসহ নিজেদের বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ভারতীয় পণ্য বর্জনের কর্মসূচিতে অংশ নেয় দলটির কিছু নেতা। জুলাই মাসের শুরুতে মাঠের আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে বিএনপি। সেই আন্দোলনে শরীক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিও আহবান জানায় বিএনপি। দলগুলোর সাথে আলোচনায় আন্দোলনের দাবিনামা সংস্কার করে ‘ডামি সরকারের পদত্যাগ, স্বল্পতম সময়ে জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দুর্নীতি, ভারতের সঙ্গে করা সমঝোতা স্মারক বাতিল এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুগুলো সামনে রেখে কর্মসূচি ঘোষণার। কিন্তু জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কর্মসূচিতে না গিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো কোটা আন্দোলনে সমর্থন দেয় এবং নেতাকর্মীদের আন্দোলনে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে আবারও বিএনপির ডজনের বেশি কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেপ্তার হন। দেশব্যাপী গ্রেপ্তার করা হয় হাজার-হাজার নেতাকর্মীকে। একপর্যায়ের গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যান। অভিযান চালিয়ে আবারও তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয় দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। রাতারাতি পাল্টে যায় বিএনপির ভাগ্য। ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান দলীয়প্রধান খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে কারাগার থেকে মুক্তি পান দলটির কয়েক হাজার নেতাকর্মী। বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ সময় বিদেশে অবস্থান নেওয়া দলটির নেতাকর্মীরাও দেশে ফিরতে থাকেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসেন বিএনপির নেতারা। পাশাপাশি দলটির পছন্দের লোকেরা দায়িত্ব পান রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। আগামী দিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। সবমিলিয়ে ‘অন্যরকম’ একটি বছর পার করছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ বলেন, সদ্য বিদায়ী বছরটি বিএনপির জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়েছেন। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের দল। আমাদের দলীয় সন্তুষ্টি হচ্ছে, জনগণের ইস্যু নিয়ে গত ১৬ বছর আমরা আন্দোলন করেছি। সেজন্য আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং আমাদের এমন কেউ নেই যার নামে মামলা হয়নি, গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাননি এবং বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হননি। স্বাভাবিকভাবে এ পরিবর্তনের পর সব অন্যায়-অত্যাচার থেকে দেশ ও আমরা মুক্ত হতে পেরেছি। সেই কারণে বিদায়ী বছরটি বিএনপির জন্য অত্যন্ত সুখকর।
বিএনপির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, গণতন্ত্রের জন্য মাঠের আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের হাজার-হাজার কর্মী কারাবরণ করেছেন, অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান, যেটা প্রত্যাশিত ছিল এবং একদিন না একদিন এটা হতোই। অবশেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে, বিএনপি যেটা চেয়েছিল, সেই ফ্যাসিস্ট ও খুনি হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে।
বিগত এক যুগের বেশি সময় ধরে নির্বাচন কমিশনকে আওয়ামী লীগ সরকারের দলদাস ও দালাল বলে সমালোচনা করে আসছিল বিএনপি। যার কারণে ২০২২ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির বিষয়ে মতামত দেয়নি বিএনপি। বিগত বছরগুলোতে নির্বাচন কমিশনের কোনো সংলাপে অংশ নেয়নি দলটি। তবে, গত ২১ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ নেওয়া এ এম এম নাসির উদ্দিনের নাম বিএনপির প্রস্তাবিত নামের তালিকায় ছিল বলে জানা গেছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিএনপির পছন্দের বিতর্কমুক্ত লোককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে পাঠানো হয় খালেদা জিয়াকে। দুই বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শর্ত-সাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তারপর বিভিন্ন সময় তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হলেও শর্ত অনুযায়ী তাকে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা হয়েছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। প্রায় সাত বছর পর গত ৭ আগস্ট বিএনপির জনসভায় খালেদা জিয়ার ভিডিও রেকর্ডিং বক্তব্য প্রচার করা হয়। আর এক যুগ পর গত ২১ নভেম্বর সেনাকুঞ্জে অনুষ্ঠিত সশস্ত্র বাহিনী দিবসে যোগ দেন তিনি।
খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরার পাশাপাশি তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল সেটিও ৫ আগস্ট সরকার পতনের মাধ্যমে কেটে যায়। কারণ, কারাবন্দি হিসেবে আইনে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ নেই বলে আওয়ামী লীগ সরকার তার বিদেশে যাওয়ার ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল। কারামুক্তির পর খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সেরে রেখেছে বিএনপি। এখন যে কোনো সময় তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারেন।
বিগত এক যুগের বেশি সময় অর্থাৎ ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত যে কোনো রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া বিএনপির জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। অনেক সময় আবেদন করেও পাওয়া যেত না অনুমতি। আবার দেওয়া হলেও সেটা কর্মসূচি শুরুর এক কিংবা দুই ঘণ্টা আগে। পাশাপাশি পুলিশের বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মসূচি শেষ করা, কর্মসূচির মাঝপথে হামলা হওয়ার ভয় ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সেই হামলায় উল্টো আসামি করা হতো বিএনপির নেতাকর্মীদের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির সেই অবস্থা কেটে গেছে। এখন বাধাহীন পরিবেশে কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে দলটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১১ সাল থেকে ‘সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা’, ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ’ এবং ২০১৮ সালের পর ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা’ ছিল বিএনপির প্রধান দাবি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর পাল্টে গেছে বিএনপির দাবি-দাওয়া। কারণ, ওই তিন দাবি ৫ আগস্টের পর পূরণ হয়ে গেছে। এখন বিএনপির একটাই দাবি, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকা অবস্থায় তারেক রহমানের বক্তব্য বা বিবৃতি প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকী একটি রিট দায়ের করেন। পরের দিন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। তারেক রহমানের সব ধরনের বক্তব্য ও বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। গত বছরের আগস্টে রিট আবেদনকারী সম্পূরক আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৮ আগস্ট এক আদেশে হাইকোর্ট তারেক রহমানের বক্তব্য, বিবৃতি, অডিও ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে সরাতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের কিছুক্ষণ পর গণমাধ্যমগুলো তারেক রহমানের বক্তব্য ও ভিডিও প্রচার শুরু করে। ফলে, প্রায় ১০ বছর পর গণমাধ্যমে ফিরে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বারবার দলের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সেটি অনেকেই মানছেন না। সারা দেশে বিশৃঙ্খলা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের বহু নেতাকর্মী। দলটির দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এক হাজারের বেশি নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অর্ধশতাধিক পদ স্থগিত করা হয়েছে। যদিও অনেকের পদ ফিরিয়ে দিয়েছে দলটি।
দীর্ঘসময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির কদর বেড়েছে কূটনীতিক পাড়ায়। ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে নিযুক্ত অধিকাংশ দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকেও বসেছেন দলটির নেতারা। অংশ নিচ্ছেন তাদের চা কিংবা লাঞ্চ বা ডিনার আমন্ত্রণে। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করে এসেছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা। এর মধ্যে গত ২২ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সাক্ষাৎ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। ২০১৪ সালের পর এটিই প্রথম কোনো ঘটনা। অর্থাৎ ভারতীয় কূটনীতিক বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে পা রাখেন।
এ প্রসঙ্গে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দলের চেয়ারপার্সনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, কূটনৈতিক অঙ্গনে বিএনপির গুরুত্ব সবসময় ছিল। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে দেশে এমন একটা সরকার ক্ষমতায় ছিল, যাদের কোনো পররাষ্ট্রনীতি ছিল না। তাদের কথা ছিল, সবাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তারা ভিয়েনা কনভেনশনের দোহাই দিয়ে কূটনীতিকদের বিভিন্নভাবে সবক দিয়ে আসছিল।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বারবার দ্রুততম সময়ে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানানো দলটিও বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অধিকাংশ নেতাকর্মীর নামে থাকা অসংখ্য মামলা নিষ্পত্তির পথে। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এখন মুক্ত। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীরা হয় জেলে নতুবা দেশের বাইরে পলাতক। নির্বাচন হলে তাতে অংশ নিতে পারবে কি না কিংবা অংশ নেবে কি না নিশ্চিত নয়। সব মিলিয়ে নতুন বছরে নির্বাচন হলে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বলে মনে করছে বিএনপি।
নতুন বছরে বিএনপির প্রত্যাশা নিয়ে কথা হয় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী বলেন, আমরা চাই বৈষম্যহীন একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আমরা চাই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলবাজমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। আমরা চাই জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, নতুন বছরে আশা করছি দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা হবে। বিগত দিনে জনগণ যে ভোটের অধিকার হারিয়ে ফেলেছিল সে অধিকার ফিরে পাবে এবং বিদেশি রেমিট্যান্স বাড়বে। দেশে জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা তো একটাই। নতুন বছরে আমরা চাই একটা নতুন নির্বাচন। কারণ জনগণের মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করেছি এবং জনগণকে সুন্দর একটা বাংলাদেশ দেবো নতুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
জা ই / এনজি