০৪ জানুয়ারি ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে জাতির ভাগ্যে মহাদুর্যোগ নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, কিছু কিছু লোক পাগল হয়ে গেছে। আমরা যেখানে সাড়ে সাড়ে ১৫ বছর ধৈয্য ধরেছি, সেখানে আরেকটু ধৈয্য ধরলে কি হবে? জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিবে। আমরা জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি। নিরপেক্ষ নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করতে সকলকে স্বোচ্চার থাকতে হবে।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে মুক্তাগাছা আর. কে সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ময়মনসিংহ মুক্তাগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপজেলা আমীর অধ্যক্ষ মামছুল হকের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল। অন্যান্যের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর ময়মনসিংহ অঞ্চলের পরিচালক ড. সামিউল হক ফারুকী, ময়মনসিংহ জেলা আমীর আবদুল করিম, নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ কামরুল হাসান মিলন, ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রামেদুল ইসলাম, সদ্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল এর শিক্ষক অধ্যাপক মো: আবদুল গফুর, শিবিরের সাবেক বিতর্ক সম্পাদক মো: গোলাম কিবরিয়া, ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান ফরাজী, জেলা শুরা সদস্য মাওলানা বদরুল আলম, ময়মনসিংহ মহানগর শিবির সভাপতি মো: শরীফুল ইসলাম খালিদ, মংমনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদালয় শাখা শিবির সভাপতি মো: ফখরুল ইসলাম, মুক্তাগাছা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ হাবীবুল হক শরীফ, উপজেলা শুরা সদস্য মাওলানা মোস্তফা রায়হান, ডা আজহারুল ইসলাম শাহীনসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও গণমান্যরা বক্তব্য রাখেন। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন উপজেলা সেক্রেটারি আবদুল্লাহ মোহাম্মদ মুজাহিদ।
এদিকে কর্মী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকেই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে মিছিল সহকারের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে মুক্তাগাছা খেলার মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। কানায় কানায় ভরে যায় পুরো মাঠ। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরা মাঠের পাশে রাস্তায় দাড়িয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বাধীনতার পর মুক্তগাছা স্কুল খেলার মাঠে এতো লোক সমাগম তারা দেখেন নি। তারা বলছেন, বিরুপ আবহাওয়া না হলে লোক সমাগম আরও বেশি হতো।প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতেই জুলাই-আগস্ট গণ অভূত্থানে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থ কামনা করেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি। এই মুক্তাগাছাও নতুন দেশ গঠনে অংশীদার। এখানেও আমাদের ভাই শহীদ হয়েছেন। অনেকেই আহত হয়ে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা তাদের এই অবদান চিরকৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, গত দেড় দশকে আমরা একটা কালো যুগ পার করেছি। আইয়ামে জাহিলিয়ার যুগে মানুষ যেভাবে বর্বর শাসনের অধীনে ছিল, আমরাও সেই সময়টি পার করেছি। প্রায় ১৮ বছর ধরে আদরা ভোটাধিকার পাইনি, গণতন্ত্র ছিল না, আইনের শাসন ছিল একবারেই অনুপস্থিত। মানুষের অন্ন, বস্ত্র বাসস্থানের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। মানুষের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। তিনি বলেন, দেশে চলেছিল একদলীয় শাসন। আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ চাকরী পায়নি, ব্যবসা করতে পারেনি। মানুষের জীবনের কারো নিরাপত্তা ছিল না। মত প্রকাশের অধিকার ছিল একেবারেই রুদ্ধ। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, লুটপাট, একদলীয় শাসনসহ নানা অনাচারের মাধ্যমে তারা দেশের সবকিছুকেই তছনছ করে দিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে সাবেক এই এমপি বলেন, এই আওয়ামী লীগ গণতহন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তারা সবকিছু ভুলে যায়। কিভাবে জোর জবরদস্তি করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় সেই ফন্দিই তারা করেছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তারা একতরফা ভোট করেছে। সেখানে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠী দিনের ভোট রাতে করেছে। মানুষ ভোট দিতে গেলে বলেছে, আপনার ভোট দেয়ার দরকার নেই। ভোট দেয়া হেয় গেছে। যারা এসবের প্রতিবাদ করেছে তাদের নির্যাতন নেমে এসেছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করার জন্য আমাদের আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম তত্ত্বাধায়ক সরকার ব্যবস্থার রুপরেখা তুলে ধরেন। আমরা এই দাবিতে পরবর্তীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সারাজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য হিটলারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা এই কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। তিনি বলেন, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পক্ষে সংসদে গঠিত কমিটি মত দিয়েছিল। তারা বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকা উচিৎ। কিন্তু হাসিনা এটিকে উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত মানেনি। সে বলেছে, এটিকে বাতিল করতে হবে। পরবর্তীতে এটি চলে গেল আদালতে। আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এমিরেটাস কিউরীদের পরামর্শ নিয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জনের ৮ জনই কেয়ারটেকারের পক্ষে মত দিয়েছে। তারা বলেছে, এটি রাখা উচিৎ। কিন্তু শেখ হাসিনা আদালতের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এটি বাতিল করেছে। তিনি সংসদ, আদালত, জনগণের মতামত, কোনো কিছুই তোয়াক্কা করেনি। তাই আমরাসহ অনেকেই তাকে ফ্যাসিস্ট বলে থাকি।
তিনি বলেন, ছাত্র জনতার অভূত্থানের পর জামায়াতের পক্ষ থেকে আমরা কেয়ারটেকারের বিষয়টিকে আবারো আদালত সামনে তুলে ধরি। আদালত সেটি আবার ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমরা আমা করছি, দেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার নির্ভয়ে প্রয়োগ করতে পারবেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আওয়ামী জামায়াতের রাজনৈতিক অধিকার শেষ করতে চেয়েছিল। আমরা কোথাও ১০জন বসলেও নাশকতার অভিযোগ এনে আমাদের ধরে নিয়ে যেত। আর ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ তাদেও দোসররা রাস্তাঘাট দখল করে সভা সমাবেশ করলেও তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। তারা দেশের শীর্ষ নেতাসহ আলেম ওলামাদের হাদকড়া পরিয়ে আদালতে নিয়ে যেত। মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর জেলে রেখেছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে থাকতে পর্যন্ত দেয়নি। সেই কালো যুগে কারো ধর্মীয় স্বাধীনতাও ছিল না। তারা অধিকাংশ ইসলামী দলের নেতাদের কারাগারে আটক করে রেখেছিল। আলেম ওলামাদের রিমান্ডে এনে শারীরিকভাবে প্রচন্ড নির্যাতন করেছে। ধর্ষণ, খুন, চুরিসহ মিথ্যা মামলায় শীর্ষ আলেমদের অপমান অপদস্ত করেছে। তারা আমাদের শীর্ষ নেতাদের ফাসি দিয়ে হত্যা করেছে। অন্যদের তিলে তিলে নির্যাতন করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। এখনো কয়েকজন কারাগারে আটক রয়েছেন। আমরা তাদের নি:শর্ত মুক্তি চাই।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের আইন করে মিমাংসিত ইস্যুকে সামনে এনে বিদেশী প্রভুদের কথায় জামায়াত নেতাদের মিথ্যা মামলায় বিচার করেছে। তারা সব যুক্তি, আইন কানুনের তোয়াক্কা না কওে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করে হত্যার পথ বেচে নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের শীর্ষ নেতা মাওলানা আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ মিথ্যা। তার অভিযোগ মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র থেমে নেই মন্তব্য করে সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পালিয়ে গেলেও তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তারা যেখানকার মাল সেখানে চলে গেছে। তবে ভারত তাদের সমস্ত শিষ্ঠাচার লংঘন করে শেখ হাসিনাকে সেখানে আশ্রয় দিয়েছে। তিনি সেখান থেকে বলছেন, সময়মত ঢুকে পড়বেন। তিনি সেখানে বসে পাল্টা ক্যু করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। দেশে অরাজকতার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র জনগণ রুখে দিয়েছে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, চোর, ডাকাত, খুনি, লুটেরা থেকে থেকে পালিয়ে যায়। আওয়ামী লীগও প্রমাণ করেছে, তারা চোর, ডাকাত, খুনি। তিনি বলেন, যে ট্রাইব্যুনালে হাসিনা সরকার আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলায় মিথ্যা বিচার করেছে, আজ সেই একই ট্রাইব্যুনালে তার বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হলেও হাসিনার বিরুদ্ধে সত্য সাক্ষী দিয়ে তাকে শতবার ফাঁসি দেয়া যাবে।
জনগণ জাতীয় ঐক্যের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে মন্তব্য করে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আমাদের ছাত্র জনতার রক্তের দায় বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আবারো রক্ত দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। গত ১৫-১৬ বছরে সব কিছু দলীয়করণ করা হয়েছে। দুর্নীতি, অপশাসনে দেশ ডুবে গিয়েছিল। এখন সংস্কারের কাজ চলছে। তবে এই সরকার সব সংষ্কার শেষ করতে পারবে না। নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে সব সংষ্কার কাজ শেষ করবেন। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের সাথে জড়িতদের কিছু অর্গান সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। এজন্য নূন্যতম যে সময় দেয়া দরকার আমরা সরকারকে সেটি দিতে চাই। তা না হলে দেশে আবারো ১৪, ১৮ বা ২৪ সালের ন্যায় নির্বাচন হতে পারে। ২/৪ মাস দেরি হলেও নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
তিনি বলেন, কিছু কিছু লোক নির্বাচনের জন্য পাগল হয়ে গেছে। যেখানে ১৫ বছর অপেক্ষা করেছে সেখানে আর কয়েক মাস অপেক্ষা করলে কোনো সমস্যা হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করেই ভোট দিতে হবে। যাতে জনগণ তাদের পচন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে।
তিনি বলেন, হাসিনা সরকার দেশের অর্থনীতি শেষ করে দিয়েছে। অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য বলেছেন, আমি দায়িত্ব না পেলে জানতাম যে, হাসিনা, রেহানা ও তাদের আত্নীয় স্বজন কিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লুপটাট ও পাচার করেছে।
হাসিনা ও তার সরকারের বিচার করতে হবে মন্তব্য কওে তিনি বলেন, তাড়াহুড়া কওে বিচার ব্যবস্থাকে ব্যাহত করা যাবে না। নির্বাচনের আগে বিচার কাজ শুরু করতে হবে। যাতে কওে মানুষ বুঝে, তাদের বিচার অন্তত শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের আমীর বলেছেন, আগামীর নেতৃত্ব যুব সমাজের হাতে তুলে দিতে চাই। যারা সৎ. দক্ষ ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে নির্বাচন করার ক্ষমতা রাখে। তবে সেটি জোটগতভাে নাকি এককভাবে হবে, সেটি সময়মত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে কারো সাথে আমাদের ঐক্য হতে পারে। আমরা জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি। যেখানে একটি ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করা হবে। আগে সংবিধানে সংবিধানে ন্যায় নীতির কথা থাকলেও তার সুফল কেউ পায়নি। এখন একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করতে পারলেই দেশবাসী তাদেও কাংখিত ইনসাফ ফিরে পাবে। যেখানে কারো উপর কোনো জুলুম করা হবে না।
মুক্তাগাছার জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই এলাকা শহীদের এলাকা। এখান থেকে আমরা যাকে প্রার্থী ঘোষণা করবো, আপনারা তাকে বিজয়ী করবেন ইনশা আল্লাহ। সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত করে ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনে আপনারা ভূমিকা রাখবেন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করেছে। তারা দেশের সব কাঠামো ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তাগাছার এই ময়দান শহীদের ময়দান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদের রক্তের ময়দান। এখানে জুলুম, নির্যাতন, দুর্নীতির কোনো সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমাদের জীবন ব্যবস্থা হবে ইসলাম। এটির বাস্তবায়ন হলে দেশে চুরি, দুর্ণীতি, ঘুষ, রাহাজানিসহ কোনো অন্যায় থাকবে না।
তিনি বলেন, আমাদের নেতাদের উপর নির্যাতন করে তাদের নতি শিকার করতে বলা হয়েছিল। জামায়াত ত্যাগ করতে বলেছিল। কিন্তু তারা হাসিমুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গণ করেছে। তারপরও কারো কাছে আত্নসমর্পণ করেননি। আমরা সত্যেও পক্ষে, ইসলামের পক্ষে জীবন দিতে জানি, কারো কাছে নতি শিকার করতে জানি না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমাদের ভাই মনিরুজ্জমানকে আঘাত করা হলো। মামলা হলো। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারলো না কেন? তাহলে কি ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো প্রশাসনে বহাল তবিয়তে রয়েছে? আমরা অতিসত্বর হামলাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানাই।
প্রধান বক্তা আরও বলেন, কেউ দেশে রাজনৈতিক বিভাজন তৈরী করবেন না। সবাই স্বাভাবিক কাজ করুন। জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে, তারা কাদের দেশ পরিচালনা দায়িত্ব দিবে। দেশের কোথাও মাস্তানী বরদাশত করা হবে না। আর কোনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডও মেনে নেয়া হবে না। রক্ত দিয়ে দেমকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছি।
মুক্তাগাচার আপামর জনতার উদ্দেশে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, কুয়াশাচ্ছন্ন প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে আপনারা এই সমাবেশে যোগ দিয়েছেন, তাই আপনাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। ভবিষ্যতে আপনারা এই মুক্তাগাছায় কোরআনের রাজ কায়েমে আমাদের পাশে থাকবেন, এই প্রত্যাশা করছি। এসময় তিনি উপস্থিত অমুসলিমদের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মুক্তাগাছার প্রতিটি মানুষ যাতে ন্যায় ও ইনসাফ পায় সেই জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করার আহবান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, গত ১৬-১৭ বছর একটি ফ্যাসিস্ট সরকার দেশকে শোষণ করেছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভূত্থানে জনগণ নতুন বাংলাদেশ পেয়েছে। মানুষ তাদের কথা বলার স্বাধীনতা পেয়েছে। মত প্রকাশ করতে পারছে। সভা সমাবেশ করার সুযোগ পেয়েছে। তিনি বলেন, এই হাসিনা সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ছাত্র শিবির। এই আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতাদের নির্মমভাবে ফাঁসি দিয়েছে। নেতাদের কর্মীদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে। জামায়াত শিবিরের কেন্দ্রীয় থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত সব অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। ৫০০ শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে বাড়ী ছাড়া, চাকরীচ্যুত, ব্যবসাচ্যুত কওে তাদেরকে মানবেতর জীবরযাপন করতে বাধ্য করেছে। বিশ হাজারের অধিক মামলা দিয়েছে। দলের নিবন্ধন বাতিল করেছে। প্রতীক কেড়ে নিয়েছে। এমনকি দলও নিষিদ্ধ করেছে।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করেছিল, এভাবে নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়ে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া যাবে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। আজকেই এই বিশাল সমাবেশই প্রমাণ করে, জামায়াতে ইসলামী আগের চেয়েও অনেক বেশী শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, এখন নতুন বাংলাদেশের দাবিদার অনেকেই হয়ে উঠেছে। ৫ আগস্ট ও জুলাই অভূত্থান নিয়ে জামায়াত শিবির কথা বলেনা। যারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারাই বলছেন, আন্দোলনে জামায়াত -শিবিরের ভূমিকা কি ছিল। তিনি বলেন, হাজারো নির্যাতন সত্ত্বেও জামায়াত-শিবির কারো কাছে মাথানত করেনি। তাই নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে জামায়াত -শিবির নিয়ে জনগণের আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা তৈরী হয়েছে।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমরা দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাদাবাজদের সাথে কখনোই আপোষ করিনি। আমাদেও দুইজন মন্ত্রী ছিলেন। তাদেও বিরুদ্ধে দুই টাকার দূর্নীতিও খুজে পায়নি। আমরা দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তারা আগামীতে সৎ, যোগ্য, বৈষম্যবিরোধী মানুষ নির্বাচিত করবেন। নতুন বাংলাদেশ নির্মানে সবাইকে একসাথে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
জা ই/এনজি