রাত ৩:১৪ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

অন্তর্বর্তী সরকারের আবরণের নিচে স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বহাল : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ অক্টোবর ২০২৪

 

 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকারের যে আবরণ, সেই আবরণের নিচে অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশসহ অনেক কর্মকর্তা আছে স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদের দোসর। কয়েকদিন পরেই পাসিং আউট হবে পুলিশের ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টর। যারা পাসিং আউট হওয়ার পরে বিভিন্ন কাজে যোগদান করবে। এখানে ৮০৩ জন আছেন শুধু সাব ইন্সপেক্টর আর ক্যাডার সার্ভিসের আছেন ৬৩/৬৪ জন, তারা সবাই শেখ হাসিনার আমলের নিয়োগ। এই ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টরের মধ্যে ২০০ জনই হচ্ছে শুধু গোপালগঞ্জের লোক।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর উত্তরার আজমপুরের আমির কমপ্লেক্সের সামনে ডেঙ্গু চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে সচেতনতার লক্ষ্যে এক কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।

এই কর্মসূচি একটা সমাবেশে রূপ নেয়। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। পরে রুহুল কবির রিজভী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ডেঙ্গু চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে সচেতনতার লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ করেন।
পুলিশের এই নিয়োগে কোন নিরপেক্ষভাবে যাচাই-বাছাই হয়েছে? প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, এখানে নিরপেক্ষভাবে কোন কম্পিটিশন হয়েছে, হয়নি । আরও অনেক ঘটনা আছে যেটা বললাম না। এসপির ৬২/৬৩ জন আর ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টর এরা কারা? কি করে এক জেলার গোপালগঞ্জের ২০০ জন লোক সাব ইন্সপেক্টরে ঢুকতে পারে। আর বাদ বাকি লোক কারা? এরা সব ছাত্রলীগ -যুবলীগ। আমি অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বলতে চাই, আবার পুনঃতদন্ত করুন। এই ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টর এবং এতোগুলো এএসপি তারা ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত সাপ হয়ে গোটা বাংলাদেশকে নীল বিষে ভরিয়ে দিবে।

কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রিজভী বলেন, আপনারা অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতার দাবি করছেন। ছাত্র-জনতার রক্তের উপর দিয়ে তো এই সরকার। এই সরকারকে সবাই সমর্থন জানিয়েছে। সেটা আপনার দেখার দরকার নাই? এক জেলার যদি ২০০ জন সাব ইন্সপেক্টর হয়, তাহলে এখানে কী পরিমাণ জালিয়াতি করেছেন শেখ হাসিনা। তা খতিয়ে দেখতে হবে।

তিনি বলেন, এই যে কোটা আন্দোলন করল ছাত্ররা আত্মাহতি দিল, শার্টের বোতাম খুলে শেখ হাসিনার র‌্যাবের সামনে তারা দাঁড়িয়ে বুলেট বরণ করেছে। নিজের জীবন দিয়ে একটা মহান গণতন্ত্রের শুভ সূচনার যে বার্তা, সেই রক্তের সঙ্গে যারা বেইমানি করবে, এই বেইমানি তো মানুষ মেনে নেবে না। এটা তো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেখা দরকার। রিজভী বলেন, আইনের শাসন কোথায়? আইনের শাসন আমরা আকাশের তারার মতো দেখতে পাই। ন্যায়বিচার আকাশের তারা যেমন দেখা যায়, ধরা যায় না সেই রকম আমরা দেখতে পেতাম। না ছিল ন্যায়বিচার, না ছিল আইনের শাসন, না ছিল কথা বলার স্বাধীনতা। কথা বলার স্বাধীনতা থাকলেই তার স্থান হতো কারাগারের মধ্যে। সাইবার নিরাপত্তা অ্যাক্টের নামে কত সাংবাদিক, কত মুক্ত চিন্তার মানুষ, কত মানুষ যারা ফেসবুকে কমেন্ট করেছে শেখ হাসিনার বিষয়ে বা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোন বিষয়ে, তাকে ধরে নিয়ে গেছে রাতের অন্ধকারে। এবং সেখান থেকে মা বোন কেউ বাদ যায়নি। আমি আয়না ঘরের কথা কথা না হয় বাদই দিলাম। কতজনকে সেখান থেকে চিরদিনের জন্য অদৃশ্য করে দিয়েছে তার কোন ঠিক নেই।

সিন্ডিকেটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করে জনগণকে স্বস্তি দেয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, আমাদেরকে গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে। এখনো মার্কেট সিন্ডিকেট যারা করে আছে তাদেরকে কেন ধরছেন না? কেন পেঁয়াজের দাম বাড়বে, কেন কাঁচামরিচের দাম বাড়বে, কেন সয়াবিন তেলের দাম বাড়বে, কেন সব কিছুর দাম বাড়বে?

ডেঙ্গুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে যদি জনগণের ভোট হতো তাহলে আপনাদের প্রতিনিধিত্ব করত তাবিথ আউয়াল। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি তারা (দলীয় নেতাকর্মীরা) অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে প্রচার করছেন। বিএনপি জনগণের দল, মানুষের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করে। ডেঙ্গু আজকে মহামারী আকারে ভয়ঙ্কর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ঢাকায়। এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনে আরো কিছু ব্যবস্থার জন্য ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি কাজ করছে।
তিনি বলেন, এখন তো শেখ হাসিনা নেই, স্বৈরাচার নেই ফ্যাসিস্ট নেই। জনগণের জন্য বিএনপি অনেক ধরনের কাজ করেছে, অনেক সচেতনতামূলক কর্মসূচি দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ করতে দিতো না, র‌্যাব করতে দিত না, যুবলীগ -ছাত্রলীগ অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করত। সে জায়গা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া গেছে।

রিজভী বলেন, হরিলুট করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। টাকা পাচারের সরকার ছিল আওয়ামী লীগ। যারা জনগণকে তোয়াক্কা করত না, জনগণের টাকা ডাকাতি করেছে। তারা তো গিয়েছে দেশটাকে তাদের নিজস্ব তালুকদারি করার জন্য। ওরা মনে করত আপনার টাকা আপনার বাড়ি সব হচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রাপ্য। এই কারণে যাদের যেখানে যাকে পেয়েছে, যাদের তাদের বিরোধী মনে করেছে, যারা অসহায় মানুষ তাদের সর্বোচ্চ কেড়ে নিয়েছে তারা।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল বলেন, দেশের কল্যাণে আমরা কাজ করি, মানুষের পাশে আমরা দাঁড়াই। এবং মানুষের সেবা এবং মানুষের জীবন রক্ষাই হলো আমাদের প্রদান কর্তব্য। এই কর্তব্যকে সামনে রেখে আমরা আবারো রাজপথে আপনাদের সঙ্গে মিলিতভাবে বাড়িতে বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ডেঙ্গুর ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করার জন্য। তাই সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি সকলে ঐক্যবদ্ধ হই , দেশকে বাঁচাতে চাই, আর ডেঙ্গু বিরোধী কর্মসূচিকে সফল করি।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, জাতীয়তাবাদী দলের নেতারা দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য জনগণের পাশে ছিলেন, এখনো আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশের যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে আপনারা দ্রুত সময়ের ভিতরে একটি নির্বাচন দিবেন।

এতে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক নেতা এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ, আক্তার হোসেন, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, মোস্তফা জামান, আনোয়ার হোসেন, এসএম জাহাঙ্গীর, জাসাসের কেন্দ্রীয় সভাপতি হেলাল খান, সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, উত্তর যুবদলের সাজ্জাদুল মিরাজ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আরিফুর রহমান তুষার, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সহ সভাপতি ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়ালসহ উত্তরের ৭টি থানা ও সব ওয়ার্ডের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

 

জা ই / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *